মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৪- কোড


·
কোড
সায়েন্স ফিকশন 

এফ আলম 

রাত বারটা ৩৫ মিনিটঃ তারছেড়া বিজ্ঞানীর মনটা আজ বেশ ভাল। অবশেষে হিউম্যান স্পিক কোড সফটওয়্যার আবিষ্কার করা গেল। এখন সফটওয়্যারটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পাড়লে কাজ শেষ হবে। ওফফফফ, পৃথিবীর মানুষ এত বকবক করতে পারে! আশেপাশের মানুষ গুলোর বকবকের জ্বালায় বিজ্ঞানী শান্তি পাচ্ছিল না। এদের হাত থেকে বাচার জন্যই এই সফটওয়্যার তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে বিজ্ঞানীর।
এখন থেকে মানুষ কথা বলার পরিবর্তে কোড ব্যবহার করবে। যেমন, ‘আমি এখন মাছ খেতে চাই’ এর পরিবর্তে ১৩৫ বললেই চলবে। রাজনীতিবিদ দের ভাষণ, মোভির ডায়লগ, অফিসিয়াল আলোচনা, প্রেমালাপ, টকশো, নাটকের সংলাপ, গরুর রচনা থেকে শুরু করে সব কিছুই এতে দেয়া আছে। আসলে মানুষ অযথা বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করে। হিউম্যান স্পিক কোড সফটওয়্যার মানব দেহে ইন্সটল করা হলে অল্প সময়ের মাঝে কথা শেষ হয়ে যাবে।
সফটওয়্যারটি খুব সহজে মানব দেহে ইন্সটল করা যায়। কোন ব্যক্তির দেহে যদি সফটওয়্যার টি ইন্সটল করা হয় এবং সেই ব্যক্তি যদি অন্য কার দুই গাকে চুমা দেয় তবে সফটওয়্যার তার দেহেও ইন্সটল হয়ে যাবে। যার অপর একবার সফটওয়্যারটি ইন্সটল করা হয় সে যাকে সামনে পাবে তাকেই চুমা দিয়ে তার দেহে সফটওয়্যারটি ইন্সটল করে দেবে। তবে যারা মিথ্যাবাদী, মিথ্যা কথা বলা যাদের পেশা তাদের দুই গালে কষে থাপ্পর না মারলে সফটওয়্যারটি ইন্সটল হবে না। সফটওয়্যারটির নিয়ন্ত্রণ একমাত্র তারছেড়া বিজ্ঞানীর হাতে।
আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে সফটওয়্যারটি কাজ করে কি না। নিজের দেহে ইন্সটল করে বিজ্ঞানী রাস্তায় বের হল। একটু হাটতেই সামনে পড়ল এক মাতাল। অতিরিক্ত নেশা করে উল্টাপাল্টা কথা বলছিল মাতালটা। তারছেড়া পরীক্ষা করার লোভ সামলাতে না পেরে নাক চেপে মাতালের দুই গালে দুইটা চুমা দিয়ে দিল। সাথে সাথে একশন, মাতালটি ২৭, ৫৮,১৭৫৬,৮৪,২ বলতে বলতে চলে গেল। চমৎকার তো!!!!!!!!!! সফটওয়্যার টি তো দারুন কাজ করছে!!! উত্তেজনায় যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই চুমিয়ে যাচ্ছে তারছেড়া। তারছেড়ার ঠোটে যেন জাদুর পরশ লেগে আছে।পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে ঘরে ফিরে গেল তারছেড়া বিজ্ঞানী।
পরদিন সকালে মাইকের বিকট আওয়াজে ঘুম ভাংল বিজ্ঞানীর। আশেপাশে কোন বিরক্তিকর জনসভা চলছে। মাইকের কর্কশ আওয়াজে কান একেবারে ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। বিরক্তিকর!! ঝটপট ঘুম থেকে উঠে মাইকের আওয়াজ অনুসরন করে বাইরে গেল বিজ্ঞানী। উদ্দেশ্য একটাই, কোনরকমে যদি একটাকে চুমিয়ে আসা যায় তবে বাকি কাজ ওইটাই করবে। হাইওয়ে রাস্তা ব্লক করে রাজনৈতিক জনসভা হচ্ছে। এর বদৌলতে দুই পাশে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল জ্যাম। পাবলিক গুলো ঘেমে একেবারে ভূত হয়ে আছে। তবুও নির্বোধের মত বসে আছে সবাই। জনসভায় কাউকে চুমা দেবার মত পছন্দ হলনা। ওইদিকে মঞ্চে বসা ওই রাজনীতিবিদের চেহাড়াতে এক ধরনের নূরানি নূরানি ভাব আছে। শালা দুধ ঘি খেয়ে একেবারে তেলতেলা হয়ে আছে। এর গালেই চুমা দেবে বলে ঠিক করল তারছেড়া। দেরি না করে মঞ্চে গিয়েই রাজনীতিবিদের গালে চুমা দিয়ে দিল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে রাজনীতিবিদ বলল, “আপনি নিশ্চয়ই আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন।’’
বিজ্ঞানী ভাবছে,লোকটা নিশ্চই মিথ্যাবাদী, তা না হলে কাজ করছে না কেন। এখন কষে থাপ্পর মারা ছাড়া কোন উপায় নেই।
গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে রাজনীতিবিদের দুই গালে কষে দুইটা থাপ্পর মেরে এক দৌড়ে মঞ্চ থেকে পালিয়ে এল। রাজনীতিবিদ ও থেমে নেই পাশে যাকে পাচ্ছে তাকে সমানে চুমিয়ে যাচ্ছে। চুমাতে কাজ না হলে কষে থাপ্পর মারছে। এভাবে একে একে পুরো জনসভায় সফটওয়্যারটি ইন্সটল হয়ে গেল। যেতে যেতে আবার মাইকের আওয়াজ বিজ্ঞানীর কানে এল,
‘ভায়েরা আমার, ৬৫৩৪, ৬৫৭, ৪৪, ৭, ১১, ৯০৯৮............’
ভালইতো কাজ করছে সফটওয়্যারটা। তবে এখনও অনেক শব্দ ইন্সটল করার বাকি আছে, রাজনীতিবিদ শুরুই করল ভায়েরা আমার বলে। সফটওয়্যারটিতে ভায়েরা আমার কথাটির কোড এখনও সংযোজন করা হয়নি। এরকম আরও অনেক শব্দকোড সংযোজনের বাকি আছে।

দিন রাত পরিশ্রম করে শব্দ কোড সংযোজন করল তারছেড়া বিজ্ঞানী। ক্লান্ত বিজ্ঞানী রোবট ‘টারজান’ কে চা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে টিভি অন করল। টকশো চলছে, তাও আবার বিজ্ঞানীর তৈরি কোডের মাধ্যমে। বিজ্ঞানীর মনটা খুশিতে ভরে গেল। বেশ কয়েকটা চ্যানেলে কোডের মাধ্যমে অনুষ্ঠান হচ্ছে। আরো কয়েকটা চ্যানেলে এই বিষয় নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। কেউ এর পক্ষে আবার কেউ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

এখন আর প্রেমিক প্রেমিকারা মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে না। দশ মিনিট কথা বলার পর আর কথাই খুজে পায় না। তিন ঘণ্টার সংসদ অধিবেশন পনের মিনিটে শেষ হয়ে যায়। অল্প দিনের ভেতর দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিদেশেও চলেগেল হিউম্যান স্পিক কোড সফটওয়্যার। কিন্তু সফটওয়্যারটি বাংলায় হওয়াতে বিদেশীরা সুবিধা করে উঠত পারছে না। লেখকেরা আর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে খাতা ভরিয়ে ফেলে না। একশ পৃষ্ঠার বই এখন আড়াই পৃষ্ঠাতে শেষ হয়ে যায়।

এতকিছু ঘটে যাবার পর ও আমি ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেলাম। আমার দেহে এখনও হিউম্যান স্পিক কোড সফটওয়্যার ইন্সটল হয়নি। আমি চাই না কোডের মাধ্যমে কথা বলে নিজের মাতৃভাষা বিসর্জন দিতে। কিভাবে যেন তারছেড়া বিজ্ঞানী আমার খবর পেয়ে গেছে। এখন সে আমাকে খুজছে। সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে আছি। দরজায় খট খট আওয়াজ হচ্ছে। একটা ছেল আছে, যে আমাকে তিন বেলা খাবার দিয়ে যায়। মনেহচ্ছে ছেলেটা খাবার নিয়ে এসেছে। খুব সাবধানে দরজা খুললাম, এক ঝাপটা মেরে আমাকে ফেলে দিয়ে কে যেন ঘরে ঢুকে পরল। ভাল করে তাকি দেখলাম কে, একি!! এতো দেখছি তারছেড়া বিজ্ঞানী।!
‘খবরদার আমার কাছে আসবেন না!’ বিকট একটা হাসি দিল তারছেড়া। বিদঘুটে কালো ময়লা ঠোট দুটো নাড়তে নাড়তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে তারছেড়া। ‘খবরদাদ, দাঁড়ান বলছি, আর এগোবেন না! না আআআআআ ৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩...............!